ধর্মশাস্ত্র
৩ নেফী ১১


যীশু খ্রীষ্ট নেফীর লোকদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেন, যখন জনতা প্রাচুর্যের ভূমিতে একত্রিত হয়েছিল, এবং তাদের মাঝে পরিচর্যার কাজ করেছিলেন; এবং এইভাবে তিনি তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করলেন।

অধ্যায় ১১দিয়ে শুরু।

অধ্যায় ১১

পিতা তাঁর প্রিয় পুত্রের সাক্ষ্য দেন—খ্রীষ্ট আবির্ভূত হন এবং তাঁর প্রায়শ্চিত্তের ঘোষণা করেন—মানুষেরা তাঁর হাতের ও পায়ের এবং কক্ষদেশের ক্ষত স্থানের চিহ্ন অনুভব করে—তারা হোশান্না বলে চিৎকার করে—তিনি বাপ্তিস্মের উপায় এবং পদ্ধতির ব্যাপারে নির্দেশনা দেন—বিবাদের আত্মা হল শয়তান—খ্রীষ্টের উপদেশাবলী হল যে মানুষের বিশ্বাস করা উচিত এবং বাপ্তিস্ম নেওয়া উচিত এবং পবিত্র আত্মাকে গ্রহণ করা উচিত। প্রায় ৩৪ খ্রীষ্টাব্দ।

এবং এখন এটা ঘটলো যে, নেফীর লোকদের মধ্য থেকে, সেখানে একটা বিরাট জনতা ধর্মধামের চারপাশে একত্রিত হয়েছিল, যেটা প্রাচুর্যের ভূমিতে ছিল; এবং তারা একে অপরের সাথে বিস্ময় ও আশ্চর্য প্রকাশ করছিল, এবং যে মহান ও বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটেছিল তা একে অপরকে দেখাচ্ছিল।

এবং তারা আরও এই যীশু খ্রীষ্টের বিষয়ে কথা বলছিল, যাঁর মৃত্যুর বিষয়ে চিহ্ন দেওয়া হয়েছিল।

এবং এটা ঘটলো যে, যখন তারা এভাবে একে অপরের সাথে কথা বলছিল, তখন তারা একটা কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো যেন সেটা স্বর্গ থেকে আসছে; এবং তারা চারদিকে দেখতে লাগলো, কারণ তারা যে কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেল তা তারা বুঝতে পারেনি; এবং এটা কোনো ককর্শ কণ্ঠস্বর ছিল না, বা এটা কোনো উচ্চস্বরও ছিল না; তথাপি, এবং এটা একটা মৃদু কণ্ঠস্বর হওয়া সত্ত্বেও এটা তাদের অন্তরের অন্তস্থলে পৌঁছেছিল, এতটাই যে তাদের শরীরের এমন কোন অংশ ছিল না যাতে কম্পন সৃষ্টি করেনি; হ্যাঁ, এটা তাদের আত্মাকে বিদ্ধ করেছিল, এবং তাদের হৃদয় জ্বলে উঠেছিল।

এবং এটা ঘটলো যে, তারা আবারও কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেলো, এবং তারা বুঝতে পারলো না।

এবং আবারও তারা তৃতীয়বার কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেলো, এবং এটা তারা কান খুলে শুনলো; এবং তাদের চোখ শব্দের দিকে ছিল; এবং তারা স্থিরভাবে স্বর্গের দিকে তাকালো, যেখান থেকে শব্দটা এসেছিল।

এবং দেখো, তৃতীয়বার তারা যে কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেয়েছিল তা বুঝতে পারলো; এবং এটা তাদের কাছে বলল:

দেখো ‌এই আমার প্রিয় পুত্র, যাঁর প্রতি আমি সন্তুষ্ট, যাঁর দ্বারা আমি আমার নামকে গৌরবান্বিত করেছি—তোমরা তাঁর কথা শোনো।

এবং এটা ঘটলো, যখন তারা বুঝতে পারলো তারা আবার স্বর্গের দিকে চোখ তুলে তাকালো; এবং দেখো, তারা একজন ব্যক্তিকে স্বর্গ থেকে নেমে আসতে দেখলো; এবং তিনি একটা সাদা বস্ত্র পরেছিলেন; এবং তিনি নিচে নেমে আসলেন ও তাদের মাঝখানে দাঁড়ালেন; এবং সমস্ত জনতার দৃষ্টি তাঁর দিকে গেল, এবং তারা তাদের মুখ খুলতে সাহস করল না, এমনকি একে অপরের কাছেও না, এবং এর অর্থ কি তা বুঝলো না, কারণ তারা ভেবেছিল যে ইনি একজন স্বর্গদূত যে তাদের কাছে উপস্থিত হয়েছিল।

এবং এটা ঘটলো যে, তিনি তাঁর হাত বাড়িয়ে জনতার কাছে বললেন:

১০ দেখো, আমি যীশু খ্রীষ্ট, পৃথিবীতে যাঁর আসার সাক্ষ্য ভাববাদীরা দিয়েছিল।

১১ এবং দেখো, আমিই জগতের আলো ও জীবন; আমি সেই তিক্ত পানপাত্র থেকে পান করেছি, যা পিতা আমাকে দিয়েছিলেন, এবং জগতের পাপ আমার উপর নিয়ে পিতাকে মহিমান্বিত করেছি, এইভাবে আমি শুরুর থেকে সকল বিষয়েই পিতার ইচ্ছাকে পালন করেছি।

১২ এবং এটা ঘটলো যে, যীশু যখন এই কথাগুলো বলছিলেন তখন সমস্ত জনতা মাটিতে পড়ে গেল; কারণ তাদের মনে পড়ে গেল যে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে খ্রীষ্ট স্বর্গে আরোহণের পরে তাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন।

১৩ এবং এটা ঘটলো যে, প্রভু তাদের উদ্দেশ্যে বললেন:

১৪ ওঠো এবং আমার কাছে এগিয়ে আসো, যাতে তোমরা আমার কক্ষদেশে তোমাদের হাত রাখতে পারো, এবং আমার হাত ও পায়ে পেরেকের দাগ অনুভব করতে পারো, যাতে তোমরা জানতে পারো যে আমিই ইস্রায়েলের ঈশ্বর, সমগ্র পৃথিবীর ঈশ্বর, এবং জগতের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেছি।

১৫ এবং এটা ঘটলো যে, লোকেরা এগিয়ে গেল, এবং তাদের হাত তাঁর কক্ষদেশে রাখলো, এবং তাঁর হাত ও পায়ে পেরেকের দাগ অনুভব করলো; এবং এটা তারা একে একে এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে করেছিল যতক্ষণ না তারা সবাই এগিয়ে গিয়েছিল, এবং তাদের চোখ দিয়ে দেখেছিল এবং তাদের হাত দিয়ে অনুভব করেছিল, এবং নিশ্চিতভাবে জেনেছিল এবং সাক্ষ্য বহন করেছিল, যে তিনিই সেই, যাঁর বিষয়ে ভাববাদীদের দ্বারা লেখা হয়েছিল, যে তিনি আসবেন।

১৬ এবং যখন তারা সকলে এগিয়ে গিয়েছিল ও নিজেরা সাক্ষী হয়েছিল, তারা একসাথে চিৎকার করে বলেছিল:

১৭ হোশান্না! সর্বোচ্চ ঈশ্বরের নাম ধন্য হোক! এবং তারা যীশুর পায়ে পড়ে, তাঁর আরাধনা করলো।

১৮ এবং এটা ঘটলো যে, তিনি নেফীর সাথে কথা বললেন (কারণ নেফী ভিড়ের মধ্যে উপস্থিত ছিল) এবং তিনি তাকে এগিয়ে আসতে আদেশ করলেন।

১৯ এবং নেফী উঠে এগিয়ে গেল, এবং প্রভুর সামনে নত হয়ে তাঁর পায়ে চুম্বন করলো।

২০ এবং প্রভু তাকে উঠতে আদেশ করলেন। এবং সে উঠে তাঁর সামনে দাড়ালো।

২১ এবং প্রভু তাকে বললেন: আমি তোমাকে ক্ষমতা দিচ্ছি যে আমি যখন আবার স্বর্গে আরোহণ করবো তখন তুমি এই মানুষদেরকে বাপ্তিস্ম দেবে।

২২ এবং আবার প্রভু অন্যদেরকে ডাকলেন, ও তাদের একইভাবে বললেন; এবং তিনি তাদের বাপ্তিস্ম দেওয়ার ক্ষমতা দিলেন। এবং তিনি তাদেরকে বললেন: এইভাবে তোমরা বাপ্তিস্ম দেবে; এবং তোমাদের মধ্যে কোন বিতর্ক থাকবে না।

২৩ সত্যি আমি তোমাদেরকে বলছি, যে কেউ তোমাদের কথা শোনার ফলে তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে, এবং আমার নামে বাপ্তিস্ম নিতে চাইবে, তোমরা তাদের এইভাবে বাপ্তিস্ম দেবে—দেখো, তোমরা নিচে গিয়ে জলের মধ্যে দাঁড়াবে, এবং আমার নামে তোমরা তাদের বাপ্তিস্ম দেবে।

২৪ এবং এখন দেখো, শব্দগুলো হল এই যা তোমরা বলবে, তাদের নাম ধরে ডেকে, বলবে:

২৫ যীশু খ্রীষ্টের কাছ থেকে আমার পাওয়া কর্তৃত্বের দ্বারা, আমি তোমাকে বাপ্তিস্ম দিচ্ছি পিতা, ও পুত্র, ও পবিত্র আত্মার নামে। আমেন।

২৬ এবং তারপর তোমরা তাদেরকে জলে নিমজ্জিত করবে, এবং আবার জল থেকে তুলে আনবে।

২৭ এবং এইভাবে তোমরা আমার নামে বাপ্তিস্ম দেবে; কারণ দেখো, সত্যি আমি তোমাদেরকে বলছি, পিতা, ও পুত্র ও পবিত্র আত্মা হল এক; এবং আমি পিতার মধ্যে, এবং পিতা আমার মধ্যে, এবং পিতা ও আমি এক।

২৮ এবং আমি তোমাদের যেভাবে আদেশ দিয়েছি সেই অনুসারে তোমরা বাপ্তিস্ম দেবে। এবং তোমাদের মধ্যে কোন বিতর্ক থাকবে না, যেমনটা আগে এই সময় পর্যন্ত ছিল; আমার উপদেশাবলীর বিষয়গুলো নিয়েও তোমাদের মধ্যে বিতর্ক থাকবে না, যেমনটা আগে এই সময় পর্যন্ত ছিল।

২৯ কারণ সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, যার মধ্যে বিবাদের আত্মা আছে সে আমার নয়, বরং শয়তানের, যে হল বিবাদের পিতা, এবং সে একে অপরের বিরুদ্ধে, রাগের সাথে বিবাদ করার জন্য মানুষের হৃদয়কে উত্তেজিত করে।

৩০ দেখো, এটা আমার উপদেশাবলী নয়, একে অপরের বিরুদ্ধে মানুষের হৃদয়কে রাগে উত্তেজিত করে তোলা; বরং আমার উপদেশাবলী হল এই যে, এমন বিষয়গুলো বন্ধ করা উচিত।

৩১ দেখো, সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, আমি তোমাদের কাছে আমার উপদেশাবলী ঘোষণা করবো।

৩২ এবং এটা আমার উপদেশাবলী, এবং এটা হল সেই উপদেশাবলী যা পিতা আমাকে দিয়েছেন; এবং আমি পিতার সাক্ষ্য বহন করি, এবং পিতা আমার সাক্ষ্য বহন করেন, এবং পবিত্র আত্মা পিতা এবং আমার সাক্ষ্য বহন করে; এবং আমি সাক্ষ্য বহন করছি যে পিতা, সর্বত্রে, সকল মানুষকে অনুতপ্ত হতে এবং আমাকে বিশ্বাস করতে আদেশ দিয়েছেন।

৩৩ এবং যে আমাকে বিশ্বাস করে এবং বাপ্তিস্ম নেয়, সেই পরিত্রাণ পাবে; এবং তারাই ঈশ্বরের রাজ্যের উত্তরাধিকারী হবে।

৩৪ এবং যে আমাকে বিশ্বাস করে না এবং বাপ্তিস্ম নেয়নি, তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে।

৩৫ সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, যে এটা আমার উপদেশাবলী, এবং আমি পিতার কাছ থেকে এর সাক্ষ্য বহন করেছি; এবং যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে সে পিতাকেও বিশ্বাস করে; এবং তার কাছে পিতা আমার সাক্ষ্য বহন করবেন, কারণ তিনি তার কাছে আগুন ও পবিত্র আত্মা পাঠাবেন।

৩৬ এবং এইভাবে পিতা আমার সাক্ষ্য বহন করবেন, এবং পবিত্র আত্মা তার কাছে পিতার এবং আমার সাক্ষ্য বহন করবে; কারণ পিতা, ও আমি ও পবিত্র আত্মা এক।

৩৭ এবং আবারও আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমাদের অবশ্যই অনুতাপ করতে হবে, এবং একটা ছোট শিশুর মতো হয়ে উঠতে হবে এবং আমার নামে বাপ্তিস্ম নিতে হবে, নতুবা তোমরা কোনভাবেই এই জিনিসগুলো গ্রহণ করতে পারবে না।

৩৮ এবং আবারও আমি তোমাদেরকে বলছি, তোমাদের অবশ্যই অনুতাপ করতে হবে, এবং আমার নামে বাপ্তিস্ম নিতে হবে, এবং একটা ছোট শিশুর মতো হয়ে উঠতে হবে, নতুবা তোমরা কোনভাবেই ঈশ্বরের রাজ্যের উত্তরাধিকারী হতে পারবে না।

৩৯ সত্যি, সত্যি, আমি তোমাদেরকে বলছি, যে এটা আমার উপদেশাবলী, এবং যে কেউ এটার উপর নির্মাণ করে সে আমার পাথরের উপর নির্মাণ করে, এবং নরকের দরজা তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হবে না।

৪০ এবং যে কেউ এর চেয়ে কম বা বেশি ঘোষণা করবে, এবং আমার উপদেশাবলী বলে এটাকে প্রতিষ্ঠিত করবে, সে মন্দতা থেকে আসে, এবং আমার পাথরের উপর নির্মিত নয়; কিন্তু সে একটা বালুময় ভিত্তির উপর নির্মাণ করে, এবং যখন বন্যা আসে এবং বাতাস তাদের উপর আঘাত করে তখন নরকের দরজাগুলো তাদের গ্রহণ করার জন্য খোলা থাকে।

৪১ অতএব, এই মানুষদের কাছে যাও, এবং আমি যা বলেছি, তা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ঘোষণা করো।

Print